1. দীপন তীব্রতার একক - লাক্স
2. দীপন ক্ষমতার একক — ক্যান্ডেলা
3. তড়িৎ প্রবাহের একক— অ্যাম্পিয়ার
4. তড়িৎ পরিবাহিতার একক — সিমেন্স
5. দূরত্বের সবচেয়ে বড় একক — পারসেক
6. ইলেকট্রনিক চার্জ পরিমাপক যন্ত্র — গ্যালভানোমিটার
7. টিউব লাইটে সাদা আলোর জন্য ব্যবহৃত হয় — আর্গন গ্যাস
8. ফ্লাশ লাইটে — জেনন গ্যাস
9. লাল আলোর জন্য — নিয়ন গ্যাস
10. নোবেল গ্যাস বলা হয় — নিস্ক্রিয় গ্যাসকে।
***************************************************************************
☼ বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস [Layers of the Atmosphere]
:- উচ্চতা, উষ্ণতা ও উপাদানের ভিত্তিতে
পৃথিবীর চতুর্দিকের বায়ুমণ্ডলকে বিভিন্ন
স্তরে ভাগ করা যায়, যেমন-
(১) ট্রোপোস্ফিয়ার,
(২) স্ট্রাটোস্ফিয়ার,
(৩)আয়নোস্ফিয়ার
(৪) এক্সোস্ফিয়ার এবং
(৫)ম্যাগনেটোস্ফিয়ার ।
(১) ট্রোপোস্ফিয়ার [Troposphere] বা ঘনমণ্ডল:-
(i) ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত ঊর্ধ্বের
বায়ুস্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার বা ঘনমণ্ডল বলে ।
বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে আমরা বাস করি ।
(ii) মেরু অঞ্চলে [Poles] ট্রপোস্ফিয়ার প্রায় ৯
কিলোমিটার ঊর্ধ্বে বিস্তৃত এবং
নিরক্ষরেখার [Equator] ওপর ট্রপোস্ফিয়ারের
উচ্চতা প্রায় ১৮ কিলোমিটার ।
(iii) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বায়ুতে প্রায় ৯০%
ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, কুয়াশা, মেঘ প্রভৃতি
থাকায় এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি,
বজ্রপাত, তুষারপাত প্রভৃতি ঘটনাগুলি ঘটতে
দেখা যায়, এজন্য ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে ‘ক্ষুব্ধ
মন্ডল’ বলে ।
(iv) বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে
ট্রপোস্ফিয়ারই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর ।
বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭৫% গ্যাসীয় পদার্থ এই স্তরে
থাকায় এখানে বায়ুরচাপ সবচেয়ে বেশি ।
(v) ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরে জলীয়বাষ্প
বা মেঘ থাকে না বললেই চলে ।
(vi) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে
ওঠা যায় ততই তাপ মাত্রা কমতে থাকে । প্রতি
কিলোমিটারে ৬.৪° বা প্রায় প্রতি ১৬৫
মিটার উচ্চতার জন্য ১° সেন্টিগ্রেড করে তাপ
কমে যায়, ‘একে উত্তাপ কমে যাওয়ার
গড়’ (Average Laps rate of temperature) বলে । ভূ-পৃষ্ঠের
ওপরে ১০-১৩ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুর তাপ
এই হারে কমতে থাকে । মধ্য অক্ষাংশে (Middle
Latitude) ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্ব সীমানায়
বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ –৭৫° সেন্টিগ্রেড থেকে –
৬০° সেন্টিগ্রেড হয় ।
(vii) এই অংশে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর
চাপ কমতে থাকে । এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব
সবচেয়ে বেশি প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ ।
(viii) ট্রপো (Tropo) ইংরেজি শব্দটির অর্থ পরিবর্তন
(Change) এবং দৈনন্দিন আবহাওয়ায় আমরা যেরকম
বিভিন্ন পরিবর্তন অনুভব করি, এই বায়ুস্তরেও সে
ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় ।
(২) স্ট্রাটোস্ফিয়ার [Stratosphere] বা শান্তমণ্ডল:-
(i) ট্রপোস্ফিয়ার-এর ওপরের ১৮ থেকে ৮০
কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল বলে ।
(ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে ধূলিকণা, মেঘ
প্রভৃতি না থাকায় এখানে ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত
প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে না ।
(iii) স্ত্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে বায়ুপ্রবাহ, মেঘ,
ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত দেখা যায় না বলে
দ্রুতগতিসম্পন্ন জেটবিমানগুলো ঝড়-বৃষ্টি
এড়িয়ে চলার জন্য স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্য
দিয়ে চলাচল করে । জেটবিমানগুলি সাধারণত
এই স্তরের মধ্যে দিয়ে চলার সময়ে আকাশে
সাদা দাগ রেখে যায় ।
•ওজনস্তর:-
(i) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডলের মধ্যে
উপরের দিকে ৫০ কিলোমিটার থেকে ৮০
কিলোমিটার পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারের যে
বায়ুস্তরটি রয়েছে তাকে ওজোনমণ্ডল বা
ওজোনোস্ফিয়ার বলা হয় ।
(ii) এই স্তরে ওজোন গ্যাসের (O3) একটি পর্দা
আছে, যার ফলে সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত
অতিবেগুনি (Ultra Violet Ray) ভূপৃষ্ঠে আসতে পারে
না ।
(iii) ওজোন গ্যাস সূর্যের তাপ ও অতিবেগুনি
রশ্মি শোষণ করে, ফলে এই স্তরের তাপমাত্রা খুব
বেশি হয় ।
(iv) ওজোনোস্ফিয়ার স্তর জীবজগতের পক্ষে
অত্যন্ত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ
করে নেওয়ায় জীবজগৎ ধ্বংশের হাত থেকে
রক্ষা পায় ।
(৩) আয়নোস্ফিয়ার [Ionosphere] বা
থার্মোস্ফিয়ার :-(i) ভূপৃষ্ঠের ঊর্ধ্বে ৮০ কিমি থেকে ৬৪০ কিমি
পর্যন্ত উচ্চতায় বিস্তৃত হালকা বায়ূস্তরকে
আয়নোস্ফিয়ার বলা হয় ।
(ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০
কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা
–৯৩° সেলসিয়াস থেকে বাড়তে বাড়তে ৪৮০
কিলোমিটার উচ্চতায় প্রায় ১২৩২°
সেলসিয়াসে পরিণত হয় ।
(iii) প্রখর সূর্য কিরণের জন্য হালকা বায়ু দিয়ে
গঠিত এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের মাত্র
০.৫% আছে ।
(iv) এই স্তরের বায়ু আয়নিত অবস্থায় রয়েছে (এই
বিরাট অঞ্চলটি বিদ্যুতযুক্ত অসংখ্য কণা অর্থাৎ,
আয়ন ও ইলেকট্রনে পূর্ণ হয়ে আছে) । এই স্তরে
তড়িৎযুক্ত কণা বা আয়নের উপস্থিতির জন্য এই
স্তরকে আয়নোস্ফিয়ারও বলা হয় । অর্থাৎ
বায়ুমণ্ডলের এই স্তরের দুটি নাম রয়েছে, যেমন-
থার্মোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ার । তবে এই
স্তরটি আয়োনোস্ফিয়ার নামেই বেশি
পরিচিত । এখানে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম,
ওজোন প্রভৃতি গ্যাস আয়নিত অবস্থায় থাকে ।
(v) তড়িতাহত অণুর চৌম্বক বিক্ষেপের ফলে
সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে এক রকম উজ্জ্বল আলোক
বিচ্ছুরণ দেখা যায়, একে মেরুজ্যোতি বা
মেরুপ্রভা বলে । ভূপৃষ্ঠের বেতার তরঙ্গগুলি
আয়নোস্ফিয়ার ভেদ করে আরও ওপরে যেতে
পারে না বলে এই স্তর থেকে বেতার তরঙ্গ
প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে । তাই
বিভিন্ন রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত গান,
বাজনা, নাটক, কবিতা, সংবাদ প্রভৃতি আমরা
রেডিও মারফত বাড়ি বসে শুনতে পাই ।
(৪) এক্সোস্ফিয়ার [Exosphere]:-ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৪০
কিমি উপরের ঊর্ধ্বের বায়ূস্তরকে
এক্সোস্ফিয়ার বলা হয় । এই স্তরের বায়ু এত
হালকা যে এই এর অস্তিত্ব প্রায় বোঝাই যায়
না ।
(৫) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার [Magnetosphere]:-
এক্সোস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের
সর্বশেষ স্তরকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে । এই
স্তরের জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আয়নিত কণার
উপস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয় ।
☼ এয়ারোনমি [Aeronomy]:- আবহবিদ্যায় ভূপৃষ্ঠের
উপরে প্রায় ১০০ কি.মি. পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের স্তর
সম্মন্ধে আলোচনা করা হয় । এর উপরে
বায়ুমণ্ডলের যে স্তর রয়েছে, সে সম্মন্ধে যে
শাস্ত্রে আলোচনা করা হয়, তার নাম
এয়ারোনমি ।
• ট্রোপোপজ [Tropopause] :- ট্রোপোস্ফিয়ার এবং
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার- এই দুই বায়ুস্তরের সীমা
নির্দেশক সংযোগ স্থলকে ট্রপোপজ বলে ।
ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুস্তর এই অঞ্চলে এসে থেমে
যায়, তাই একে ট্রপোপজ বলে । ট্রপোপজ
অঞ্চলে নিরক্ষরেখার ওপর বায়ুর তাপমাত্রা
-৮০° সেন্টিগ্রেড এবং মেরুদ্বয়ের ওপর -৪৫°
সেন্টিগ্রেড হয়ে থাকে, কারণ মেরুদ্বয়ের ওপর
যেখানে ট্রপোপজের উচ্চতা মাত্রা ৮ কিমি,
সেখানে নিরক্ষরেখার ওপর ট্রোপোপজের
উচ্চতা ১৮ কিমি । ট্রপোপজের স্তরে বায়ু
চলাচল বা তাপীয় ফল তেমন দেখা যায় না,
তাই এই স্তরকে স্তব্ধ স্তর ও বলে ।
• স্ট্র্যাটোপজ [(Stratopause] :-
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে দিয়ে যতই উঁচুতে
ওঠা যায় ততই উত্তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং
(উত্তাপ) ৫০ কিমি উচ্চতায় সর্বোচ্চ (০°
সেন্টিগ্রেড) হয় । তবে ৫০ কিমির বেশি উচ্চতা
থেকে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা আবার কমতে শুরু
করে, অর্থাৎ তাপমাত্রার বৃদ্ধি থেমে যায় বা
পজ করে । স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও
মেসোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী অঞ্চলে
তাপমাত্রার স্থিতাবস্থা থাকায় এই অঞ্চলকে
স্ট্র্যাটোপজ বলা হয় ।
• মেসোস্ফিয়ার:- স্ট্র্যাটোপজের ওপর থেকে
বায়ুমণ্ডলের যতদূর উচ্চতা পর্যন্ত উষ্ণতা কমতে
থাকে, সেই অংশটিকে মেসোস্ফিয়ার বলে ।
মেসোস্ফিয়ার স্তরটি স্ট্র্যাটোপজ স্তরের ওপর
ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত
বিস্তৃত রয়েছে । ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতায়
এই স্তরে বায়ুর তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে
(কম বেশি -৯৩° সেলসিয়াস) । মহাকাশ থেকে
যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে সেগুলি
মেসোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে এসে পুড়ে ছাই
হয়ে যায় ।
• মেসোপজ (Mesopause): মেসোস্ফিয়ারের
ওপরে যে উচ্চতায় তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়া
থেমে যায়- অর্থাৎ পজ করে, তাকে মেসোপজ
বলে ।
2. দীপন ক্ষমতার একক — ক্যান্ডেলা
3. তড়িৎ প্রবাহের একক— অ্যাম্পিয়ার
4. তড়িৎ পরিবাহিতার একক — সিমেন্স
5. দূরত্বের সবচেয়ে বড় একক — পারসেক
6. ইলেকট্রনিক চার্জ পরিমাপক যন্ত্র — গ্যালভানোমিটার
7. টিউব লাইটে সাদা আলোর জন্য ব্যবহৃত হয় — আর্গন গ্যাস
8. ফ্লাশ লাইটে — জেনন গ্যাস
9. লাল আলোর জন্য — নিয়ন গ্যাস
10. নোবেল গ্যাস বলা হয় — নিস্ক্রিয় গ্যাসকে।
***************************************************************************
☼ বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস [Layers of the Atmosphere]
:- উচ্চতা, উষ্ণতা ও উপাদানের ভিত্তিতে
পৃথিবীর চতুর্দিকের বায়ুমণ্ডলকে বিভিন্ন
স্তরে ভাগ করা যায়, যেমন-
(১) ট্রোপোস্ফিয়ার,
(২) স্ট্রাটোস্ফিয়ার,
(৩)আয়নোস্ফিয়ার
(৪) এক্সোস্ফিয়ার এবং
(৫)ম্যাগনেটোস্ফিয়ার ।
(১) ট্রোপোস্ফিয়ার [Troposphere] বা ঘনমণ্ডল:-
(i) ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত ঊর্ধ্বের
বায়ুস্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার বা ঘনমণ্ডল বলে ।
বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে আমরা বাস করি ।
(ii) মেরু অঞ্চলে [Poles] ট্রপোস্ফিয়ার প্রায় ৯
কিলোমিটার ঊর্ধ্বে বিস্তৃত এবং
নিরক্ষরেখার [Equator] ওপর ট্রপোস্ফিয়ারের
উচ্চতা প্রায় ১৮ কিলোমিটার ।
(iii) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বায়ুতে প্রায় ৯০%
ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, কুয়াশা, মেঘ প্রভৃতি
থাকায় এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি,
বজ্রপাত, তুষারপাত প্রভৃতি ঘটনাগুলি ঘটতে
দেখা যায়, এজন্য ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে ‘ক্ষুব্ধ
মন্ডল’ বলে ।
(iv) বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে
ট্রপোস্ফিয়ারই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর ।
বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭৫% গ্যাসীয় পদার্থ এই স্তরে
থাকায় এখানে বায়ুরচাপ সবচেয়ে বেশি ।
(v) ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরে জলীয়বাষ্প
বা মেঘ থাকে না বললেই চলে ।
(vi) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে
ওঠা যায় ততই তাপ মাত্রা কমতে থাকে । প্রতি
কিলোমিটারে ৬.৪° বা প্রায় প্রতি ১৬৫
মিটার উচ্চতার জন্য ১° সেন্টিগ্রেড করে তাপ
কমে যায়, ‘একে উত্তাপ কমে যাওয়ার
গড়’ (Average Laps rate of temperature) বলে । ভূ-পৃষ্ঠের
ওপরে ১০-১৩ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুর তাপ
এই হারে কমতে থাকে । মধ্য অক্ষাংশে (Middle
Latitude) ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্ব সীমানায়
বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ –৭৫° সেন্টিগ্রেড থেকে –
৬০° সেন্টিগ্রেড হয় ।
(vii) এই অংশে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর
চাপ কমতে থাকে । এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব
সবচেয়ে বেশি প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ ।
(viii) ট্রপো (Tropo) ইংরেজি শব্দটির অর্থ পরিবর্তন
(Change) এবং দৈনন্দিন আবহাওয়ায় আমরা যেরকম
বিভিন্ন পরিবর্তন অনুভব করি, এই বায়ুস্তরেও সে
ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় ।
(২) স্ট্রাটোস্ফিয়ার [Stratosphere] বা শান্তমণ্ডল:-
(i) ট্রপোস্ফিয়ার-এর ওপরের ১৮ থেকে ৮০
কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল বলে ।
(ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে ধূলিকণা, মেঘ
প্রভৃতি না থাকায় এখানে ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত
প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে না ।
(iii) স্ত্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে বায়ুপ্রবাহ, মেঘ,
ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত দেখা যায় না বলে
দ্রুতগতিসম্পন্ন জেটবিমানগুলো ঝড়-বৃষ্টি
এড়িয়ে চলার জন্য স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্য
দিয়ে চলাচল করে । জেটবিমানগুলি সাধারণত
এই স্তরের মধ্যে দিয়ে চলার সময়ে আকাশে
সাদা দাগ রেখে যায় ।
•ওজনস্তর:-
(i) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডলের মধ্যে
উপরের দিকে ৫০ কিলোমিটার থেকে ৮০
কিলোমিটার পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারের যে
বায়ুস্তরটি রয়েছে তাকে ওজোনমণ্ডল বা
ওজোনোস্ফিয়ার বলা হয় ।
(ii) এই স্তরে ওজোন গ্যাসের (O3) একটি পর্দা
আছে, যার ফলে সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত
অতিবেগুনি (Ultra Violet Ray) ভূপৃষ্ঠে আসতে পারে
না ।
(iii) ওজোন গ্যাস সূর্যের তাপ ও অতিবেগুনি
রশ্মি শোষণ করে, ফলে এই স্তরের তাপমাত্রা খুব
বেশি হয় ।
(iv) ওজোনোস্ফিয়ার স্তর জীবজগতের পক্ষে
অত্যন্ত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ
করে নেওয়ায় জীবজগৎ ধ্বংশের হাত থেকে
রক্ষা পায় ।
(৩) আয়নোস্ফিয়ার [Ionosphere] বা
থার্মোস্ফিয়ার :-(i) ভূপৃষ্ঠের ঊর্ধ্বে ৮০ কিমি থেকে ৬৪০ কিমি
পর্যন্ত উচ্চতায় বিস্তৃত হালকা বায়ূস্তরকে
আয়নোস্ফিয়ার বলা হয় ।
(ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০
কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা
–৯৩° সেলসিয়াস থেকে বাড়তে বাড়তে ৪৮০
কিলোমিটার উচ্চতায় প্রায় ১২৩২°
সেলসিয়াসে পরিণত হয় ।
(iii) প্রখর সূর্য কিরণের জন্য হালকা বায়ু দিয়ে
গঠিত এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের মাত্র
০.৫% আছে ।
(iv) এই স্তরের বায়ু আয়নিত অবস্থায় রয়েছে (এই
বিরাট অঞ্চলটি বিদ্যুতযুক্ত অসংখ্য কণা অর্থাৎ,
আয়ন ও ইলেকট্রনে পূর্ণ হয়ে আছে) । এই স্তরে
তড়িৎযুক্ত কণা বা আয়নের উপস্থিতির জন্য এই
স্তরকে আয়নোস্ফিয়ারও বলা হয় । অর্থাৎ
বায়ুমণ্ডলের এই স্তরের দুটি নাম রয়েছে, যেমন-
থার্মোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ার । তবে এই
স্তরটি আয়োনোস্ফিয়ার নামেই বেশি
পরিচিত । এখানে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম,
ওজোন প্রভৃতি গ্যাস আয়নিত অবস্থায় থাকে ।
(v) তড়িতাহত অণুর চৌম্বক বিক্ষেপের ফলে
সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে এক রকম উজ্জ্বল আলোক
বিচ্ছুরণ দেখা যায়, একে মেরুজ্যোতি বা
মেরুপ্রভা বলে । ভূপৃষ্ঠের বেতার তরঙ্গগুলি
আয়নোস্ফিয়ার ভেদ করে আরও ওপরে যেতে
পারে না বলে এই স্তর থেকে বেতার তরঙ্গ
প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে । তাই
বিভিন্ন রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত গান,
বাজনা, নাটক, কবিতা, সংবাদ প্রভৃতি আমরা
রেডিও মারফত বাড়ি বসে শুনতে পাই ।
(৪) এক্সোস্ফিয়ার [Exosphere]:-ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৪০
কিমি উপরের ঊর্ধ্বের বায়ূস্তরকে
এক্সোস্ফিয়ার বলা হয় । এই স্তরের বায়ু এত
হালকা যে এই এর অস্তিত্ব প্রায় বোঝাই যায়
না ।
(৫) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার [Magnetosphere]:-
এক্সোস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের
সর্বশেষ স্তরকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে । এই
স্তরের জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আয়নিত কণার
উপস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয় ।
☼ এয়ারোনমি [Aeronomy]:- আবহবিদ্যায় ভূপৃষ্ঠের
উপরে প্রায় ১০০ কি.মি. পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের স্তর
সম্মন্ধে আলোচনা করা হয় । এর উপরে
বায়ুমণ্ডলের যে স্তর রয়েছে, সে সম্মন্ধে যে
শাস্ত্রে আলোচনা করা হয়, তার নাম
এয়ারোনমি ।
• ট্রোপোপজ [Tropopause] :- ট্রোপোস্ফিয়ার এবং
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার- এই দুই বায়ুস্তরের সীমা
নির্দেশক সংযোগ স্থলকে ট্রপোপজ বলে ।
ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুস্তর এই অঞ্চলে এসে থেমে
যায়, তাই একে ট্রপোপজ বলে । ট্রপোপজ
অঞ্চলে নিরক্ষরেখার ওপর বায়ুর তাপমাত্রা
-৮০° সেন্টিগ্রেড এবং মেরুদ্বয়ের ওপর -৪৫°
সেন্টিগ্রেড হয়ে থাকে, কারণ মেরুদ্বয়ের ওপর
যেখানে ট্রপোপজের উচ্চতা মাত্রা ৮ কিমি,
সেখানে নিরক্ষরেখার ওপর ট্রোপোপজের
উচ্চতা ১৮ কিমি । ট্রপোপজের স্তরে বায়ু
চলাচল বা তাপীয় ফল তেমন দেখা যায় না,
তাই এই স্তরকে স্তব্ধ স্তর ও বলে ।
• স্ট্র্যাটোপজ [(Stratopause] :-
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে দিয়ে যতই উঁচুতে
ওঠা যায় ততই উত্তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং
(উত্তাপ) ৫০ কিমি উচ্চতায় সর্বোচ্চ (০°
সেন্টিগ্রেড) হয় । তবে ৫০ কিমির বেশি উচ্চতা
থেকে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা আবার কমতে শুরু
করে, অর্থাৎ তাপমাত্রার বৃদ্ধি থেমে যায় বা
পজ করে । স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও
মেসোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী অঞ্চলে
তাপমাত্রার স্থিতাবস্থা থাকায় এই অঞ্চলকে
স্ট্র্যাটোপজ বলা হয় ।
• মেসোস্ফিয়ার:- স্ট্র্যাটোপজের ওপর থেকে
বায়ুমণ্ডলের যতদূর উচ্চতা পর্যন্ত উষ্ণতা কমতে
থাকে, সেই অংশটিকে মেসোস্ফিয়ার বলে ।
মেসোস্ফিয়ার স্তরটি স্ট্র্যাটোপজ স্তরের ওপর
ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত
বিস্তৃত রয়েছে । ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতায়
এই স্তরে বায়ুর তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে
(কম বেশি -৯৩° সেলসিয়াস) । মহাকাশ থেকে
যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে সেগুলি
মেসোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে এসে পুড়ে ছাই
হয়ে যায় ।
• মেসোপজ (Mesopause): মেসোস্ফিয়ারের
ওপরে যে উচ্চতায় তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়া
থেমে যায়- অর্থাৎ পজ করে, তাকে মেসোপজ
বলে ।
Comments
Post a Comment